স্টাফ রিপোর্টার//সময়নিউজবিডি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতিসহ এই জেলার সাংবাদিকদেরকে নিয়ে চরম আপত্তিকর-মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব বিস্ময় প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহারেরও দাবী জানানো হয়। মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী নামে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক কোন্ কারণে এ ধরণের ঔদ্বত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করলেন, তা জানানোর প্রেক্ষাপটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব এই বিবৃতি প্রদান করছে।
গত ২০ জানুয়ারি ‘এদারায়ে তালিমিয়া’র ব্যানারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণার দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা। মানববন্ধনের সংবাদ কেন প্রকাশিত হলোনা, তা নিয়ে জেলার সিনিয়র সাংবাদিক-দৈনিক ইনকিলাব প্রতিনিধি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি খ.আ.ম. রশিদুল ইসলামকে চার্জ করেন জাকারিয়া নামের একজন মাওলানা। বিষয়টি জেলার শীর্ষ আলেম হিসেব পরিচিত মাওলানা সাজিদুর রহমানকে অবহিতের পর তিনিও একইভাবে সংবাদ না আসার কৈফিয়ত চান। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই জেলায় কর্মরত সাংবাদিকগণ তাদের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে সংবাদ প্রেরন করার দায়িত্বটুকুই পালন করেন। সংবাদ প্রকাশনার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। সেস্থলে একজন সংবাদকর্মীকে তাদের চার্জ করা কতোটুকু যুক্তিযুক্ত হয়েছে? সেসময় তারা ওই সংবাদকর্মীকে কটাক্ষ করে কথাবার্তা বলেন। বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে পরদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবে জরুরি সভা আহবান করা হয়। ওই সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা মানববন্ধনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছেন বলেও তাদের বক্তব্যে তুলে ধরেন। শুধু ওইদিনই নয়, বিভিন্ন সময় তাদের হাতে অনেক সাংবাদিক নাজেহাল-নিগৃহিত হয়েছেন বলেও অভিযোগ তুলে ধরেন। সভায় সকলের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্তে তাদের কোনো কর্মসূচির সংবাদ প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি পেশাগত কাজে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সরকারের কাছে দাবী জানানো হয়।
সভায় জেলার সিনিয়র সাংবাদিকদের সকলে উপস্থিত থেকে সিদ্ধান্তে একমত পোষন করেন। প্রেস ক্লাবের সিদ্ধান্তের পর দুয়েজন মাদ্রাসা শিক্ষক ফেসবুকে এবং ভুইফোর অনলাইনে সাংবাদিকদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য চালাতে থাকেন। তারা ‘কাদিয়ানীদের টাকা খেয়ে সাংবাদিকরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে’ এমন মানহানিকর মন্তব্য করেন। এসব বক্তব্য তুলে ধরে তারা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি প্রদর্শন করেন। প্রেস ক্লাবের সদস্যদের ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে হুমকি দিয়েও নানা বার্তা পাঠান।ওইসব বার্তায় তাদের ‘বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের আগে বিষয়টি নিস্পত্তি না করলে পরিণতি ভালো হবে না’ এরকম বলেও হুমকি দেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের শেষ দিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী কোরআন-হাদিসের আলোকে বয়ান না করে সাংবাদিকদের বিষোদগারে লিপ্ত হন। আপত্তিকর ভাষায় তিনি সাংবাদিকদের কাফের এবং জামায়াত- শিবিরের এজেন্ট বলে বক্তব্য দেন। শুধু তাই নয়, তিনি সাংবাদিকরা কাদিয়ানী হয়ে গেছে এবং কাদিয়ানীদের টাকা খেয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন। তার এজাতীয় ঘৃণ্য বক্তব্যে সাংবাদিক সমাজতো বটেই গোটা জেলার মানুষ বিস্মিত হয়েছেন। তিনি প্রেস ক্লাব সভাপতির নাম নিয়ে তাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করেন এবং খুবই আপত্তিকর মন্তব্য করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাব সভাপতি খ.আ.ম. রশিদুল ইসলাম কেবল একজন সাংবাদিকই নন, তিনি একজন কোরানে হাফেজ এবং আলেমও বটে। দীর্ঘ সময় তিনি জেলা সদরের কোর্ট মসজিদে খতমে তারাবীহর নামাজ পড়িয়েছেন। জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার ছাত্রকালীন জেলায় কাদিয়ানী বিরোধী আন্দোলনের গোড়ার দিকের একজন সক্রিয় কর্মীও ছিলেন তিনি। আজকে যারা এসব নিয়ে মাঠ গরম করেন, তাদের মতো এতো বাগাড়ম্বরতার চিন্তা-মিডিয়া কাভারেজের চিন্তা মাথায় নিয়ে তিনি এই আন্দোলন করেননি। আমরা খুবই বিস্মিত যে, মাদ্রাসার একজন আলেম কোরাআন-হাদিসের কোন্ জায়গা থেকে অন্যকে কাফের বলার মতো শিক্ষা শিক্ষা পেলেন? তিনি এভাবে সাংবাদিকদের কাফের বলতে পারেন কি না, সেটি তার কাছে জিজ্ঞাসা এবং দেশের বর্ষীয়ান আলেমদের কাছে অামাদের প্রশ্ন। ‘সাংবাদিকরা কাদিয়ানীদের টাকা খেয়ে তাদের সংবাদ বর্জন করেছেন’ তার কাছে অামরা এমন প্রমাণও চাইছি। অবশ্যই তাকে এই প্রমাণ তুলে ধরতে হবে।
আবদুর রহিম কাসেমীর এই উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরদিনই জেলার আশুগঞ্জে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র- শিক্ষকরা তাদের এক মানববন্ধন থেকে সাংবাদিকদের ওপর লাঠিসোঠা নিয়ে হামলা করে। আমরা মনে করি, আবদুর রহিম কাসেমীর এমন বক্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাগরিক সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্যে হুমকীস্বরুপ। শুধু তাই নয়, তার এই বক্তব্য ঐতিহ্যবাহী জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসার মান-মর্যাদা ও মাহফিলের আয়োজনকে নি:সন্দেহে খাটো করেছে এবং মাহফিলের আয়োজন সাংবাদিকদের বিষোদগারের জন্যেই করা হয়েছে বলে এখন জেলার মানুষজন বলছেন।
জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদ্রাসা এই জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি প্রতিষ্ঠান,যা সর্বজনের শ্রদ্ধার একটি প্রতিষ্ঠান। এখানে বহু দ্বীনী-আলেম-উলামা রয়েছেন। যারা স্বগুণে সকলের কাছে সম্মানিত। তেমনি এই নামী প্রতিষ্ঠানটিকে পূঁজি করে আবদুর রহিম কাসেমীসহ কতিপয় আলেম নিজেদের জাহির করার-নিজের স্বার্থ সিদ্ধির কাজে লিপ্ত রয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। বারংবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিঘ্নিতের পেছনে তাদের ভূমিকাকে অনেকাংশে দায়ী করা হয়। আমরা মনে করি, তাদের এসব ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ড এই ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে সারা বিশ্বে জঙ্গী জেলা হিসেবে পরিচিত করে তোলার সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে। ওয়াজ মাহফিলে মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমী প্রশাসনের প্রতি প্রেস ক্লাব সভাপতির কর্মকাণ্ড খোঁজ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। আমরাও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানাই, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অস্থির-অশান্তির পেছনে কারা? সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ না হওয়ার ছুতোয় তারা কোন্ উদ্দেশ্য হাসিল করতে চান? তাদের কর্মকাণ্ড কি? তারা আখেরাত না দুনিয়ার চিন্তায় ব্যস্ত সেগুলো খুঁজে দেখা দরকার। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, সাংবাদিকদের নখদর্পনে অনেককিছুই। কারা কি করছেন সবই অামাদের জানা আছে। কারা বিন্দু থেকে সিন্দু হওয়ার ইতিহাস গড়েছেন, সেসবও আমরা জানি। সুতরাং সাংবাদিকদের সম্পর্কে ভেবে চিন্তে কথা বলুন ।
আমরা অবিলম্বে মাওলানা আবদুর রহিম কাসেমীকে তার আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্ন সৃষ্টি করার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি। ঐতিহ্যবাহি জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতিনিয়ত সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী আলেমদের চিহ্নিত করণসহ তাদের অপসারণ করে এই মাদ্রাসার সুনাম অক্ষুন্ন রাখাতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের প্রতি সাংবাদিক সমাজ জোর দাবী জানান।
ইনাম/সময়নিউজবিডি টুয়েন্টিফোর।
Leave a Reply